Daily Bangla Times :


Published : 2019-02-11 16:00:00




Daily Bangla Times :


Published : 2019-02-11 16:00:00




  • Politics
  • বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বার্তা.

বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বার্তা

বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া বার্তা


গণতন্ত্রকে কব্জাবদ্ধ করে এক দশক ধরে বাংলাদেশে চলছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে দাবি করলেও বর্তমানে রাষ্ট্র পরিচালনায় বাকশালী কায়দায় ক্ষমতায় ঠিকে আছে মজিব কন্যা শেখ হাসিনা। প্রশাসনের সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবৈধ এবং অন্যায়ভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনাকারী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে আজ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিত করছেন শেখ হাসিনা। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকাকে কোনো মূল্যই দিচ্ছেন না তিনি। এককভাবে ক্ষমতায় থাকতে জনগণের ভোটের অধিকার হরন করে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কবর রচিত করছেন শেখ হাসিনা। নির্দলীয় সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও জনগণের ভোটের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। পর পর দুইবার ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আঁকড়ে আছে শেখ হাসিনা। অথচ বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর বিশ্বাস ছিল, গত ৩০ ডিসেম্বর সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। বাস্তব চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবারো ৩০ ডিসেম্বর রাতে আধারে ভোটবক্স অবৈধ ব্যালট পেপার দিয়ে ভর্তি করে নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এক দলীয় নির্বাচন করেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে বিশ্বমানের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আসতে পারেনি শেখ হাসিনা সরকারের নানা প্রতিবন্ধকতায়। সরকারের পক্ষপাতপুষ্ট পর্যবেক্ষকরাও ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন পরবর্তী অস্বচ্ছ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছেন। এছাড়া নির্বাচন পরবর্তী অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন, কোন একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যখন জাতীয় নির্বাচন হয়, বাংলাদেশে সেই নির্বাচন কখনো সুষ্ঠু হয় না। যে কারণে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কব্জাবদ্ধ গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। যার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতিই সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে দেশটির প্রভাবশালী ছয় কংগ্রেসম্যানের যৌথ বিবৃতির মধ্যে দিয়ে।

জাহিদ এফ সরদার সাদী: বিবৃতিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে পররাষ্ট্র দফতর কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা জানতে চেয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পের কাছে মঙ্গলবার চিঠি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। নির্বাচন জালিয়াতি, ভোট কারচূপি, ভোটার নির্যাতনের নানা দিক তুলে ধরে এ বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় ওই চিঠিতে।

মঙ্গলবার ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো বিষয়টি সামনে আসে কমিটির টুইট বার্তায়। পরে অবশ্য হাউজ ফরেন আফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে পুরো চিঠিটি প্রেস রিলিজ আকারে প্রকাশ করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের কাছে যে ৬ জন প্রভাবশালী পররাষ্ট্র বিষয়ক কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে স্বাক্ষর করেছেন হাউস কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান এলিয়ট এল এনজেল। কংগ্রেস মাইকেল টি ম্যাকল (টেক্সাসের রিপাবলিকান), কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার। কংগ্রেসম্যান ব্রাড শারমান (ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট), এশিয়া প্যাসিফিক সাব কমিটির চেয়ারম্যান। কংগ্রেসম্যান ট্রেড ইয়াহো (ফ্লোরিডার রিপাবলিকান), এশিয়া প্যাসিফিক সাব কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার। কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি লেভিন ও কংগ্রেসউইমেন অ্যান ওয়াগনার। যারা যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের আর্মর্ড সার্ভিস কমিটির শুনানিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘এক দলীয় শাসন’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

হাউজ ফরেন এফেয়ার্স কমিটির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানানো হয়, আমরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নেতিবাচক প্রবণতা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবের গুরুতর অভিযোগ এ প্রবণতাটিকে আরো শক্তিশালী করেছে। এ নেতিবাচক প্রবণতার বিষয়টি আমলে নিয়ে এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর পদক্ষেপ সম্বলিত একটি রূপরেখা প্রণয়নের আমরা অনুরোধ জানাই।

আরো বলা হয়, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারে প্রতি সমর্থন একান্ত জরুরি। সেই যাত্রায় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে ব্যাপকভিত্তিক অনিয়মের প্রতিবেদন বেড়িয়েছে, তা মার্কিন স্বার্থের প্রতি চরমভাবে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের এশীয় নীতির বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, এ বছর এশিয়ায় আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডে সিরিজ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তার অব্যাহত অঙ্গীকার ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। যেটি বাংলাদেশে থেকেই শুরু হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের নির্বাচনটিকে একটি বড়মাত্রার জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন আখ্যা দিয়ে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয় ওই চিঠিতে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী ও গর্বিত গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন চলাকালে প্রচারণায় সহিংসতা, গণগ্রেফতার এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের বিষয়ে আমরা বরবরই হতাশ ছিলাম। বলা চলে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাটিই হুমকির মুখে পড়েছিল।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দাবি করে যে, এ নির্বাচনে তারা ৯৬ শতাংশ আসনে বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোট এ নির্বাচনের চেয়েও বেশি আসনে জিতেছিল। যে নির্বাচনটি দেশের প্রধান বিরোধী দল (বিএনপি) বর্জন করেছিল এবং আওয়ামী লীগ অর্ধেকের চেয়েও বেশি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল।

৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রসঙ্গে আরো বলা হয়, যদিও সরকারনিযুক্ত নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে যে নির্বাচন বৈধ ছিল, তা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচনে ব্যাপকভিত্তিক কারচুপি এবং ব্যাপকভিত্তিক ভোটারদের দমনের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করা উচিত।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী যখন ভোটগ্রহণ শুরু হয় তখন সন্দেহজনকভাবেই ব্যালট বক্সগুলো ভর্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও এমন খবরও পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা ভোটারদের ভোটপ্রদানে বাধা প্রদান করেছে। দুপুরের খাবারের সময়েই অনেক ভোটকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে অথবা ব্যালট প্যাপার শেষ হয়ে গেছে। অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন, তাদের ভোট ইতোমধ্যেই দেয়া হয়ে গেছে। নির্বাচনী ব্যাবস্থাটি আরো নাজুক করবার জন্য, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপুষ্ট বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থার অ্যাক্রিডিটেশন এবং ভিসা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদলীয় ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের শুনানীতে। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সিনেট ভবনে ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কমান্ডার অ্যাডমিরাল ফিলিপস এস ডেভিডসন সিনেটে উপস্থাপিত শুনানীতে এ মন্তব্য করেন।

এ সময় শুনানীতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জয় পাকাপোক্ত করে অব্যাহতভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার যে প্রবণতা দেখা গেছে তা উদ্বেগকে সামনে নিয়ে আসে। নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা দেশটিকে কার্যত এক দলের শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।

শুনানির বাংলাদেশ অংশে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়ে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বলয় কৌশল তৈরিসহ বেশ কিছু মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে।

শুনানীতে বলা হয়, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাথে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, এটা করতে হবে কৌশলগত বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মান বজায়, প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করতে এখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে হবে।

এশিয়ায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নিরাপত্তা অংশীদার উল্লেখ করে শুনানিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদার। আঞ্চলিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে এ অংশীদারির গুরুত্ব রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাসবাদ দমন, মুসলিম সংখ্যাধিক্যতা, চরমপন্থা দমন, মানবিক সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলা আর জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়ার কারণে দেশটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।’

মার্কিন কংগ্রেসের প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যানদের সম্প্রতি যৌথ বিবৃতি পর্যালোচনা করে অভিজ্ঞমহল মনে করেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসতেই হবে। এবং সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আরেকটি জাতীয় নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কলঙ্কমুক্ত করা ছাড়া শেখ হাসিনার সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই।

জাহিদ এফ সরদার সাদী
বাংলাদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক বৈদেশিক উপদেষ্টা এবং বিএনপির বিশেষ দূত।









Comment